করোনার আগেই লোপাট ৩০০ কোটি টাকা
কখনো বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে পণ্য কিনে, আবার কখনো পণ্য সরবরাহ না করেই কোটি কোটি টাকার বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদারেরা।
দুদকের মামলার তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ঠিকাদার জাহের উদ্দিন সরকার ও তাঁর পরিবারের তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছরে ১৬৯ কোটি টাকা লোপাট করেছে।
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি দুদক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ২৫ দফা সুপারিশ পাঠিয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি কতটা গভীর, করোনাভাইরাস এসে তা দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গত মার্চে দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম–দুর্নীতির চিত্রটি কেমন ছিল? ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য খাতের ১৯টি প্রকল্প ও হাসপাতালের কেনাকাটাতেই প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতি শনাক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এসব দুর্নীতির ঘটনায় দুদক ১৯টি মামলা করেছে। এগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ঠিকাদার জাহের উদ্দিন সরকার ও তাঁর পরিবারের তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই ১৬৯ কোটি টাকা লোপাট করেছে। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের যন্ত্রপাতি এবং আসবাব কেনাকাটার নামে এই লুটপাট হয়। জাহের উদ্দিন এখন পলাতক বলে দুদক সূত্র বলছে।
দুদকের তদন্ত সূত্র জানায়, কখনো বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে পণ্য কিনে, আবার কখনো পণ্য সরবরাহ না করেই কোটি কোটি টাকার বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদারেরা। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রকল্প পরিচালকেরা। তবে এই হিসাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেরানি ও গাড়িচালকের পদে থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আবজাল হোসেন ও আবদুল মালেক নেই। দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ও জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনা ও আরিফ চৌধুরীও এই হিসাবের বাইরে।
দুদকের নথিপত্রে দেখা যায়, করোনার আগে স্বাস্থ্যের দুর্নীতির ঘটনায় ১৯টি মামলার মধ্যে ৯টি হয়েছে করোনা পরিস্থিতির আগে। বাকি ১০টি মামলা হয়েছে গত চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতের অরাজকতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠার পর মামলা নিয়ে দুদক তৎপর হয়।
অবশ্য দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি এমন নয়। অনুসন্ধানে তাঁরা যখন যা পেয়েছেন, তার ভিত্তিতে তখনই মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে আমরা দুটি খাতে খুব গুরুত্ব দিয়ে ভালোভাবে কাজ শুরু করি—একটি শিক্ষা, অন্যটি স্বাস্থ্য। দুটি খাতের দুর্নীতির উৎস বন্ধে আমরা সরকারকে কিছু পরামর্শ পাঠাই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতি বন্ধের পদক্ষেপ নিতে বলি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সরকারকে যে পরামর্শগুলো দিয়েছি, সেগুলো গুরুত্ব পায়নি।’
إرسال تعليق